আমরা যারা মফস্বল শহরে বসবাস করি, প্রায়শ একটি জিনিসের প্রতি খুব উদাসীন থাকি, সেটা হল সেপটিক ট্যাংক। শখের বাড়ি তৈরী করার জন্য দীর্ঘদিনের সঞ্চয় ব্যবহার করি, কিন্তু ছোট গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয় টিকে এড়িয়ে যায়।
আমাদের চিন্তাভাবনাঃ
১। ফুটিং কলাম ছাড়া যেখানে বেশি ফাকা জায়গা আছে, ঐখানে সেপটিক ট্যাংক করতে হবে।
২। জায়গা ছোট হলে চারটি কলাম নিয়ে সেপটিক ট্যাংক করতে হবে।
৩। সাইজে এতো বড় এবং গভীর করতে হবে, যাতে আগামী ১৫-২০ বছর সেপটিক ট্যাংকে হাত দেয়া না লাগে।
৪। সোক ওয়েলের দরকার নাই, আমার সেপটিক ট্যাংক যথেষ্ট বড়।
৫। সেপটিক ট্যাংকের গাথুনীতে ১০ ইঞ্চি ওয়ালের প্রয়োজন নাই, অযথা টাকা খরচ।
৬। সর্বপ্রকারের পানির ফ্লো সেপটিক ট্যাংকে দিতে হবে।
৭। সোক ওয়েল তো করেছি, বালু , ব্রিক ব্যাট দিয়ে ভরাট করার প্রয়োজন নাই।
পরিবেশ ইঞ্জিনিয়াররা কি বলেনঃ
১। একটি বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা। আর সেপটিক ট্যাংক এবং সোক ওয়েল তার মধ্যে অন্যতম। যাকে কিনা পরিবেশবাদীরা নীরব ঘাতক বলে অভিহিত করেন।
২. যথাযত মান এবং দিক বিবেচনা করে সেপটিক ট্যাংক তৈরী করতে হয়, এই ছোট অংশটি খুব সংবেদনশীল যা বিল্ডিং এর ভিত্তিকে দূর্বল করতে ভূমিকা রাখে।
৩.প্রতি ৩ থেকে ৫ বছর পর পর পরিষ্কার করা উত্তম। ক্ষেত্র বিশেষে ১-২ বছর বাড়ানো যেতে পারে।
কেন নীরব ঘাতক বলা হয়?
মাটির নিচে গর্ত বদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকলে তার ভেতর নানা ধরনের ক্ষতিকারক বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়।অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফার ডাই অক্সাইড সহ সালফারের অন্যান্য গ্যাস, মিথেন , এমনকী বিষাক্ত কার্বন মোনোক্সাইড তৈরি হতে পারে।বদ্ধ থাকার ফলে এসব গ্যাস ক্রমশ ঘন হতে থাকে এবং সেই সাথে অক্সিজেনের স্বল্পতা তৈরি হতে থাকে।
কখনো কখনো এ ধরনের বদ্ধ কূপ একেবারে অক্সিজেন শূন্য হয়ে যেতে পারে।
যার ফলে মানুষ এসব গর্তে ঢুকলে অক্সিজেনের অভাবে মানুষ বা যে কোনো প্রাণী দ্রুত অচেতন হয়ে যেতে পারে এবং তার জীবন হুমকিতে পড়তে পারে। এছাড়া বিকট আকারে বিস্ফোরণ হতে পারে।
প্রকৃত নিয়মঃ
সেপটিক ট্যাংক কেমন হওয়া প্রয়োজন আসুন এ সম্পর্কে জানি।
বিল্ডিং এর এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে সেপটিক ট্যাংকের তলানি ভিত্তি থেকে কমপক্ষে ১ ফুট উচুতে থাকে এবং কলাম থেকে ২ ফুট দূরে অবস্থান করে।
-সেপটিক ট্যাংকের দৈর্ঘ্য প্রস্থের ২ থেকে ৮ গুণ ধরতে হবে ।
-.ভিত্তিতে ১:৩:৬ অথবা ১:২:৪ অনুপাতে সিসি ঢালাই করতে হবে ।
-.সিমেন্ট মসলা দ্বারা ইটের গাঁথুনী করে সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করতে হবে ।
-.ভিতরের দেওয়ালে ১:৩ অনুপাতে ১২ মিমি পুরুত্বে প্লাস্টার করতে হবে ।
-.সেপটিক ট্যাংকের নূন্যতম প্রস্থ ৬০ সেমি এবং তরলের গভীরতা ১ মিটার ধরতে হবে ।
-সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নামার আগে অবশ্যই বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করা উচিত। এ বিষয়গুলোয় একটু নজর দিলেই দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
-সোক ওয়েল ব্রিক ব্যাটস, মোটা বালি এবং চিকন বালি দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী পুরন করতে হবে।
-পানির প্রবাহ যথাযথ রাখার জন্য ইনলেট আউটলেট সুন্দর করে লেভেলিং করতে হবে।
-প্রয়োজন অনুযায়ী পরিদর্শন পিট স্থাপন করতে হবে।
সর্বোপরি অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে।
Recent Comments