কনক্রিট তৈরীর খরচঃ

আমরা বাংলাদেশে কংক্রিট তৈরি করার জন্য স্টোন চিপসের পাশাপাশি ব্রিক চিপসও ব্যবহার করে থাকি। তবে স্টোন চিপস দিয়ে তৈরি কংক্রিটের খরচ তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি কারণ স্টোন চিপসের প্রতি ঘনফুটের দাম ব্রিক চিপসের চেয়ে বেশি। ফলে স্টোন চিপস দিয়ে তৈরি বাড়ির খরচ স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি হবে।

ভবন তৈরীর পর আরোপিত ওজন (লোড)

আমরা প্রতিনিয়ত তুলনা করতে ভালোবাসি। ওমুক বিল্ডিংয়ের খরচ এত কম কিন্তু আমার বিল্ডিংয়ের খরচ কেন এত বেশি? আরোপিত ওজন (লোড) এক্ষেত্রে একটা ফ্যাক্টর। কারণ অতিরিক্ত আরোপিত ওজন যেটা আপনার ভবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সেটা হিসেবে নিতে হয় বলেই স্বাভাবিকভাবেই বিল্ডিংয়ের ডিজাইনে অনেক পরিবর্তন হয় ফলে অনেক সময়ই খরচ বেড়ে যায়।

বাগান

অনেকই বাড়ির সৌন্দর্যের জন্যে ছাদে বাগান করতে চান। এক্ষেত্রেও বিল্ডিং আরোপিত লোড বাড়ছে। সাথে ছাদে ডেড লোডের পাশাপাশি লাইভ লোডও বৃদ্ধি পায়। ফলে সেফ বিল্ডিং করতে গেলে খরচ বাড়ছে।

Money in building house
Money in building house

কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে আপনার বাড়ি

আমরা গত কয়েক বছরে দেখেছি, অনেক বাসা আসলে রেসিডেন্সিয়াল ব্যবহারের জন্যে তৈরি করা হলেও পরে সেখানে ফ্যাক্টরি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু একটি রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিংয়ের লোডিং আর ফ্যাক্টরির লোডিং এক নয়। এটি নির্ভর করে বিল্ডিংয়ের টাইপ এবং ব্যবহারের উপর। যেমন রিডিং রুম এবং স্ট্যাক করে রাখা রিডিং রুমের লোড একরকম হবে না, চার্চ এবং মসজিদ একই লোডিংয়ে তৈরি হয় না, রিটেইল মার্কেট এবং হোলসেল মার্কেট একই লোডিংয়ে তৈরি হয় না। তাই একটি রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিং যে লোডিং ধরে তৈরি হবে, স্বাভাবিকভাবেই একটি গার্মেন্টস বিল্ডিং তার চেয়ে বেশি লোডিং ধরেই তৈরি করতে হবে। এটির উপরও বিল্ডিংয়ের খরচ নির্ভর করে।

ভূমিকম্প এলাকা

বিএনবিসি ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ অনুযায়ী ভূমিকম্প এলাকাগুলোকে তিন ভাগে এবং সাম্প্রতিক ২০১৭ অনুযায়ী চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিল্ডিংয়ের খরচ এটির উপরও নির্ভর করে। কম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা থেকে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বিল্ডিংয়ের খরচ বেশি হবে।

ঘনবসতি এলাকা নাকি নদীর ধারে বাড়ি

এটিও বিল্ডিংয়ের খরচ বাড়ার অন্যতম কারণ। ঘনবসতি এলাকায় বাতাসের প্রেসারের চেয়ে সমুদ্র বা নদীর ধারে বাতাসের প্রেসার বেশি হবে। বেশি প্রেসার সহায়ক বিল্ডিং করতে গেলে খরচ বাড়বে।

বিল্ডিংয়ের ওকুপেন্সি গুরুত্ব

বিএনবিসিতে বিল্ডিংয়ের ওকুপেন্সি ভাগ করা হয়েছে বিল্ডিংয়ের গুরুত্বের উপর। যেমন হসপিটাল, স্লাইকোন সেন্টার, টক্সিক বা কেমিক্যাল ম্যাটেরিয়াল ইত্যাদি বিল্ডিংকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়। ফলে এসব বিল্ডিং করতে নরমাল বিল্ডিংয়ের চেয়ে খরচ বাড়বে।

ভূমিকম্প প্রতিরোধী বিল্ডিং

ভূমিকম্প প্রতিরোধী বিল্ডিংগুলোতে নরমাল বিল্ডিংয়ের চেয়ে স্পেশাল ডিটেইলিং করতে হয়। যা করতে গেলে বিল্ডিংয়ের খরচ বাড়বে।

মাটির ধারণক্ষমতা

বিল্ডিংয়ের সমস্ত লোড মাটিতে স্থানান্তর করলে মাটি যদি সেই লোড নিতে না পারে তবে সেই বিল্ডিং ভেঙে পড়তে পারে। মাটির ধারণক্ষমতা একেক জায়গায় একেক রকম। ফলে একেক জায়গায় একেক রকম ফাউন্ডেশন লাগে। ফলে নরমাল ফুটিংসহ বিল্ডিংয়ের চেয়ে পাইল দিয়ে বিল্ডিং করতে গেলে বা মাটির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে ট্রিটমেন্ট করে বিল্ডিং করলে খরচ বাড়বে।

লবণাক্ত এলাকা

লবণাক্ত এলাকায় কংক্রিটের ক্লিয়ার কভার বাড়াতে হয়। আর ক্লিয়ার কভার বাড়লে মেম্বারের ক্যাপাসিটি কমতে থাকে বিধায় সাইজ বাড়াতে হয়। ফলে বিল্ডিংয়ের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বিল্ডিং কনফিগারেশন

অনেক জায়গায় বিল্ডিং লম্বায় অনেক কিন্তু প্রস্থে সে তুলনায় অনেক কম হয়। আবার অনেক জায়গায় কংক্রিট ওয়াল বা শেয়ার ওয়াল ব্যবহার করতে হয়। এধরণের বিষয়গুলোর জন্যও বিল্ডিংয়ের খরচ বেড়ে যায়।

বিল্ডিং ব্যবহারের উপযোগী কিনা

অনেক বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের পরপরই বীম বা স্লাবে অনেক সময় ডিফ্লেকশন দেখা দেয়। আবারো অনেক সময় অনেকদিন পরে গিয়েও ডিফ্লেকশন হয়। এধরনের বিল্ডিং ব্যবহার করা আরামদায়ক না এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এসব যেন না হয় সেভাবেই ডিজাইন করা উচিত। আর এটি করতে গেলে বিল্ডিংয়ের খরচ বাড়ে। আবার ভূমিকম্পের সময় বিল্ডিং যদি অধিক পরিমাণে কাঁপে তবেও সেটি মানুষের বসবাসের উপযোগী থাকে না। ফলে এটি রোধ করতে খরচ বাড়ে।

Money in Construction
Money in Construction