একটি আধুনিক রান্নাঘর যেমন হওয়া উচিত

গ্রাম বাংলায় রান্নাঘরকে ডাকা হয় “পাক ঘর”। কারণ, এখানে শুধু খাবার পাক করা, মানে রান্না করাই হয় না বরং সবকিছু পরিচ্ছন্নও রাখতে হয়। তাই ঘরের সবচেয়ে জরুরী এই জায়গাটিকে সুন্দরভাবে ডিজাইন এবং ডেকোরেশন করার জন্য সবাই এখন সচেতন।

একটি আদর্শ/আধুনিক রান্নাঘরের পাঁচটি অংশ থাকে –

প্যানট্রিঃ এখানে রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য বয়াম, কৌটা, বক্স ইত্যাদি থাকে খাবারদাবার সংরক্ষণের জন্য।

স্টোরেজঃ এখানে বাসনকোসন এবং রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম থাকে।

সিংকঃ এখানে সবজি, বাসনকোসন ইত্যাদি ধোয়া হয়।

প্রিপারেশনঃ এখানে শাকসবজি, মাছ-মাংস ইত্যাদি কাটা এবং প্রসেস করা হয়। সাধারণত একটা বড়সড় কাউন্টার অথবা অন্তত টেবিল থাকে এই অংশে।

কুকিংঃ এখানে চুলা এবং ওভেন রাখা হয় রান্নাবান্নার কাজে।

স্টোরেজ ছাড়া বাকি অংশগুলো সাধারণত পাশাপাশি থাকে যাতে রাঁধুনীর কাজ করতে সুবিধা হয়। অনেক বাসাতেই দেখা যায় ত্রিভূজের আকৃতিতে সাজানো হয় এগুলো। স্টোরেজ নিরাপত্তার খাতিরেই কিছুটা দূরে স্থাপন করা হয়।

তিন ধরণের শেইপ সবচেয়ে প্রচলিত রান্নাঘর তৈরির ক্ষেত্রে –

সমান্তরালঃ এক্ষেত্রে কিচেনের ওয়ার্কস্টেশনগুলো পাশাপাশি সমান্তরালভাবে সাজানো হয়।

এল-শেইপঃ এক্ষেত্রে ওয়ার্কস্টেশনগুলোর ভেতর দু’টি পাশাপাশি আর একটি যেকোন এক বাহু বরাবর হয়। এতে করে কোন সরঞ্জাম হাতের নাগালে পাবার জন্য বেশি দূরে চলাফেরা করতে হয় না।

ইউ-শেইপঃ এই ডিজাইনে ওয়ার্কস্টেশনগুলো ইংরেজি “ইউ” অক্ষরের আকৃতিতে থাকে। ফলে একটি ছোট জায়গার ভেতরেই সব কাজ সেরে ফেলা যায়।

তবে রান্নাঘর ডিজাইনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী হলো নিজেকে প্রশ্ন করা, যেমন- আপনি কীভাবে কাজ করে অভ্যস্ত এবং আপনি এতদিন যে ধরণের কিচেন ব্যবহার করেছেন সেখানে কি কি বিষয় আপনার অপছন্দ।

আসুন জেনে নেই কি কি উপকরণ ব্যবহার করে কিচেনের বিভিন্ন অংশ তৈরি হয়।

শেলফ ও দরজা
কিচেন কেবিনেট, শেলফ এবং দরজা বানাবার মূল উপকরণ হলো পিজম টিএফএল। এগুলো এতই মজবুত যে, ১০-১৫ বছর পর্যন্ত চলে যায়। ম্যালামাইনও ব্যবহার করেন অনেকে। সেক্ষেত্রে দরজার জন্য ১৮ মিঃমিঃ এবং ক্যাবিনেটের জন্য ১৫ মিঃমিঃ প্রস্থের ম্যালামাইন ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

রান্নাঘরের ডেস্ক
রান্নাঘরের ডেস্ক

আপনি যদি শৌখিন হয়ে থাকেন এবং মাঝে মধ্যেই কিচেনের চেহারা পাল্টাতে পছন্দ করেন, তাহলে দরজার ম্যাটেরিয়েল এমন রাখতে পারেন যা কয়েক বছর পর পরই বদলানো যায়। বাকি ম্যাটেরিয়েলগুলো আরো দীর্ঘস্থায়ী হলেই ভালো হয়। এতে করে কিচেনের লুকটা বদলাতে পারবেন কিছুদিন পর পরই।

কাউন্টারটপ
সাধারণত তিন ধরণের ম্যাটেরিয়েল ব্যবহার করা হয় কাউন্টারটপ বানাতে –
লেমিনেটঃ কাউন্টার-এর ওপরের অংশটি হাই-প্রেসার লেমিনেট দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়।

পাথরঃ কাউন্টারটি পাথরের বিভিন্ন রূপ দিয়ে বানানো হয়। সবচেয়ে প্রচলিত হলো গ্রানাইট, মার্বেল আর কোয়ার্টজ।
তবে আধুনিক কিচেনে ০.৮ সেঃমিঃ থেকে ১.৫ সেঃমিঃ প্রস্থের অ্যাক্রিলিক কাভার ব্যবহারের প্রচল বেশ বেড়েছে।

বেজবোর্ড
এই জায়গাতে আর্দ্রতা প্রতিরোধক ম্যাটেরিয়েল ব্যবহার করলে ভালো হয়। যেমনঃ লেমিনেট দিয়ে আবৃত প্লাইউড অথবা প্লাস্টিক।

রান্নাঘরের অভ্যন্তরীণ কাজ
রান্নাঘরের অভ্যন্তরীণ কাজ

কিচেন ছোট ! কি করি?
ছোট কিচেনের ক্ষেত্রে একটি ইনটেলিজেন্ট ট্রিক হলো দেয়ালের স্পেসকে কাজে লাগানো। আপনার কাউন্টারটপের ওপরে দেয়ালের ফাঁকা স্থানগুলোতে ক্যাবিনেট বসিয়ে সেখানে যাবতীয় তৈজসপত্র রাখতে পারেন। এতে ফ্লোরের জায়গা নষ্ট কম হবে এবং কিচেনকে বড় দেখাবে।

ডেকোরেশন
কিচেনে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা জরুরী। কারণ, এখানে খুব মনযোগ দিয়ে কাজ করতে হয় তা নাহলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি, রান্না থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া আর জলীয় বাষ্প কিচেনের ভেতরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়াকে কঠিন করে ফেলে। তাই একাধিক অথবা একটি বড় জানালা থাকা এবং তা খোলা রাখা খুব জরুরী। আরো ভালো হয় এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহার করলে। তাছাড়া দেয়ালে উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করলে একইসাথে আলোও রিফ্লেক্ট করবে বেশি আর কিচেনটি দেখতে বড় দেখাবে।

মনে রাখতে হবে, রান্নাঘর নিয়মিত পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর রাখা অপরিহার্য। কারণ, এখান থেকেই নিশ্চিত হয় পরিবারের সবার তৃপ্তি ও সুস্বাস্থ্য।

রান্নাঘরের বিস্তারিত
রান্নাঘরের বিস্তারিত