নিজের একটা বাড়ি তৈরির স্বপ্ন আমাদের সবারই থাকে। কিন্তু সেই বাড়ি তৈরির খরচ নেহায়েৎ কম না। অনেকেরই সারাজীবনের পুঁজি একত্র করেও একটি দালান বাড়ি গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। আবার অনেকেই চান কংক্রিটের বাড়ি না বানিয়ে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দারুণ এক বসতি গড়তে। কম খরচে মনের মতো করে বাড়ি তৈরি করা অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু সেজন্য প্রয়োজন টেকনিক এবং বিচক্ষণতা। আসুন জেনে নেই কী কী উপায় অবলম্বনে কম খরচে বাড়ি তৈরি করতে পারবেন।

একটুখানি কৌশল আর ইচ্ছাশক্তি

প্রাথমিক যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন, সেগুলো হলো –

  • বাড়ির নকশাঃ চেষ্টা করবেন বাড়ির নকশা যতটা সম্ভব সাদামাটা রাখতে। কারণ যত বেশি কারুকাজ আর নকশা, উপাদান তত বেশি খরচ হবে, খরচও একইসাথে বাড়বে। আয়তাকার, বর্গাকার অথবা যেকোন জ্যামিতিক শেপের স্থাপনায় খরচ কম পড়বে।
  • পরিকল্পনা ছাড়া কর্মসূচি নয়ঃ যেকোন কাজ অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে যায় যদি পরিকল্পনা ঠিকঠাক করা হয়ে থাকে। আপনি যদি আগেই হিসেব না করে রাখেন কেমন বাড়ি বানাবেন, কোথায় কী পরিমাণ র ম্যাটেরিয়েল খরচ হবে, তাহলে কাজে নামার পর জলের মতো টাকা বেরিয়ে যাবে কিন্তু মনের মতো বাড়ি আর বানানো হবে না।
  • ফ্লোর এরিয়া ও স্পেস প্ল্যানিংঃ স্কয়ার কাট ফ্লোর ডিজাইনে জায়গা কম নষ্ট হয়। এছাড়া ইদানিং ওপেন স্পেস-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এতে দেয়াল ও কলাম বা পিলারের জন্য নষ্ট হওয়া জায়গা বেঁচে যায়। আলো-বাতাসও বেশি আসে। ফলে ছোট জায়গায় বানানো বাড়িকেও বড় আর উন্মুক্ত লাগে। তবে এর ডিজাইনের জন্য কিছু বাড়তি বীম ব্যবহারের দরকার পড়ে ছাদে। এসবের খরচ এবং জায়গা খরচ থেকে বাঁচতে চাইলে কৌশল করে কিছু কলাম সেট করা যেতে পারে বাড়ি ভেতর। তবে সেগুলোও এমনভাবে সেট করতে হবে যেন বাসার ভেতরের খোলা আবহটা নষ্ট না হয়।
  • ম্যাটেরিয়েল সিলেকশনঃ কম খরচে বাড়ি বানানোর অন্যতম কৌশল হলো কম দামী ম্যাটেরিয়েল সংগ্রহ করা। ব্যবহৃত কিচেনওয়্যার অনলাইন শপ-এ অর্ডার করলে খুব কম খরচে পাওয়া যায়। এছাড়া মার্চেন্টদের সাথে ভালো দামাদামি করতে পারলে একসাথে অনেককিছুই কিনে নেওয়া যায় স্বল্প খরচে। বাড়ি বানানোর উপাদান হিসেবে স্বল্প খরচে যে ম্যাটেরিয়েলগুলো পাবেন সেগুলো হলো.
  • প্রিফেব্রিকেটেড প্যানেলঃ এগুলো সাধারণত কাঠের ফ্রেম হয়। আগে থেকেই বাড়ির আকারে তৈরি থাকে। তাই শ্রমিক খরচ এবং সময় ব্যয় কমে আসে। এমনকি ওয়েদারের কারণে নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাবারও সম্ভাবনা থাকে না। ঘরের সেকশনগুলোতেও ফিটিং-এ কোন সমস্যা হয় না কারণ সব কাজ আগে থেকেই করা থাকে। ইদানিং যে প্যানেলগুলো নকশা করা হয়, সেগুলো দেখতে প্রিফেব্রিকেটেড লাগে না।
  • কংক্রিট শিটসঃ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়েলগুলোর মাঝে কংক্রিট শিট ইদানিং দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলোর দামও কম, দেখতেও স্টাইলিশ। পাশাপাশি, এগুলো দীর্ঘস্থায়ী, ওয়াটারপ্রুফ, শব্দ দূষণ প্রতিরোধী এবং ইনসুলেশন ঘটায়। সবচেয়ে সুবিধাজনক বিষয় হলো এটি অগ্নিকান্ড হওয়া থেকে বাঁচায়।
Building home
Building home
  • স্টোন ক্ল্যাডিংঃ পাথরে তৈরি বাড়ি দেখতে দারুণ হলেও নিশ্চয়ই স্বল্পব্যয়ী নয়। সে কারণে পাথরের প্রলেপ ব্যবহার করা যেতে পারে বাড়ির দেয়ালের ওপর। এতে ম্যাটেরিয়েলের খরচও কম পড়ে আর আলাদা করে শ্রমিকেরও দরকার পড়ে না, নিজে থেকেই করা যায় একটু চেষ্টা করলে। রাস্টিক, মডার্ন ইত্যাদি বিভিন্ন স্টাইলের স্টোন ক্ল্যাডিং হয়। ধরণের ওপর ভিত্তি করে এর পুরুত্বে পার্থক্য ঘটে।
  • শিপিং কনটেইনারঃ ব্যবহৃত শিপিং কনটেইনারগুলো কম খরচে পাওয়া যায়। একাধিক কনটেইনার একত্রিত করে বেশ বড়সড় বাড়ি বানানো সম্ভব। এগুলো দেখতে স্টাইলিশ আর স্থাপনও সহজ।
  • টিম্বারঃ টিম্বার হলো সবচেয়ে ট্রেন্ডি এবং স্টাইলিশ বাড়ি বানানোর উপকরণ। তবে খেয়াল রাখবেন পুরনো টিম্বার বেশি মজবুত ও টেকসই। আর এটি পরিবেশেরও ক্ষতি করে না। তাই এটি স্বল্প ব্যয়ে বাড়ি বানানোর জন্য একটি দারুণ চয়েস হতে পারে।

বাড়ি বানাবার প্রজেক্টে নামবার আগে অবশ্যই সঠিক পরিকল্পনা করে নেওয়া দরকার। আপনার বাজেট কেমন, আপনি কেমন বাড়ি বানাতে চাইছেন, আপনার বাজেটের ভেতর কেমন বাড়ি বানানো সম্ভব, সেটি কতদিন টিকবে ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় আগে থেকে পরিকল্পনা করে নেওয়া খুব জরুরী। আপনার নিজের বাড়িটি হোক আপনার মনের মতো।