একটি দালানের নির্মাণকাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। সময়ের সাথে সাথে নির্মাণ পদ্ধতির সাথে সাথে এসব যন্ত্রপাতির ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। আসছে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কৌশল যা নির্মাণকাজকে করছে সহজতর, দ্রুত এবং বানাতে সাহায্য করছে আরো মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী দালান কোঠা ও বসতবাড়ি। সেরকমই একটি যন্ত্র হলো ভাইব্রেটর। মূলত দালানের কনক্রিট ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয় ভাইব্রেটর নামের এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। আসুন জেনে নেওয়া যাক কখন, কেন ও কীভাবে ব্যবহার করতে হয় এই যন্ত্র।

কখন ব্যবহার করতে হয় এবং কীভাবে কাজ করে?

কনক্রিট ঢালাইয়ের সময়ে সাধারণত ফর্মার মধ্যে মশলা (সিমেন্ট, পানি ও বালুর মিশ্রণ) ঢালা হয়। আরসিসির মধ্যে সেটা পড়ার সময় কিছু কিছু জায়গায় আটকে যায়। এর মধ্যে বাতাস জমে যা ফাঁক সৃষ্টি করে কাঠামোকে দুর্বল করে ফেলে। এজন্য কলাম, বীম কিংবা মেঝে ঢালাইয়ের সময় ভাইব্রেটর ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রটির নির্মাণ দালানের কাঠামোগত মজবুতির জন্য অনেক সুবিধা করে দিয়েছে। 

বিভিন্ন রকমের ভাইব্রেটর আছে, যেগুলো বিভিন্নভাবে নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়। এদের জন্য সাইট, ভূমি, দালানের ধরন এসবের ভিত্তিতে উপোযোগিতা উপর নির্ভর করে নিয়মনীতি দেওয়া আছে, যা ঠিকমত মেনে সঠিকভাবে তা ব্যবহার করতে হবে। এদের কর্মপদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও মূল কার্যপদ্ধতিতে মিল পাওয়া যায়। ভাইব্রেটর মূলত ফর্মাতে কম্পন সৃষ্টি করে মশলাগুলিকে ভালভাবে পৌছাতে সাহায্য করে এবং বায়ু থাকলে তা বের করে দিতে সাহায্য করে। এতে করে পরিমাণমত মশলা আরসিসি রডের সাথে সুদৃঢ়ভাবে বন্ধন তৈরি করে।

Floor Casting
Floor Casting

প্রকারভেদ ও ব্যবহার

সাধারণত কনক্রিটের মিশ্রণ এর উপর ভাইব্রেটরের প্রকরণ নির্ভর করে। আবার কাজের ধরনের উপরেও নির্ভর করে কীভাবে কোন ভাইব্রেটর ব্যবহার করা লাগবে। দালানের প্রকারভেদ ও সাইটের মাটি ও অবস্থানের উপর নির্ভর করেও ঠিক করা হবে কোন রকমের ভাইব্রেটর ব্যবহার করা হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক। 

১. ইমারসান বা নিডল ভাইব্রেটর –

সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত ভাইব্রেটর হলো ইমারসান বা নিডল ভাইব্রেটর। এটি সাধারণত ডিজেল ইঞ্জিন চালিত যাতে একদিক বন্ধ একটা নিডল বা স্টিল টিউব আছে যেটিতে ভাইব্রেটিং এলিমেন্ট থাকে। রিইনফোর্সমেন্ট-এর দূরত্বের উপর নির্ভর করে এই টিউবের মাপ ৪০-১০০ মিলিমিটার ব্যাসের হয়। এতে সাধারণত ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট পর্যন্ত ভাইব্রেট করা হয় এবং এর জন্য কনক্রিটের স্তরের মাপ ৬০০ মিলিমিটারের চেয়ে বেশি হতে পারবে না। 

২. এক্সটার্নাল বা সাটার ভাইব্রেটর –

এই ভাইব্রেটরগুলি পূর্বপরিকল্পিত পয়েন্টে ফর্মার সাথে ক্ল্যাম্প করে আটকিয়ে ব্যবহার করা হয়। এটি একটা জায়গায় লাগিয়ে রাখা হলেও পরে তা সরিয়ে সরিয়ে সব জায়গায় সমান মশলা যাওয়া নিশ্চিত করা হয়। ইন্টারনাল ভাইব্রেটরের চেয়ে এর পাওয়ার কনজাম্পশন বেশি। এটা সাধারণত প্রি-কাস্ট কনক্রিটের জন্য এবং সাইটে পাতলা সেকশানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

৩. সারফেস ভাইব্রেটর –

অগভীর সারফেসে যার গভীরতা ২৫০ মিলিমিটারের বেশি নয় এমন সারফেসে সরাসরি ভাইব্রেট করিয়ে মশলা ঠিকমত কম্প্যাক্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয় সারফেস ভাইব্রেটর। ছোট ছোট স্ল্যাব এবং পেভমেন্টের স্ল্যাবের ঢালাই ও মেরামতির কাজে সারফেস ভাইব্রেটর ব্যবহার করা হয়।

৪. কনক্রিট ভাইব্রেটর টেবিল –

ল্যাবরেটরি এবং প্রিকাস্ট কনক্রিট বানানোর ফ্যাক্টরিগুলোতে এটি ব্যবহৃত হয়।

ভাইব্রেশনের রকমফের ও কীসের ভিত্তিতে নিবেন?

ফর্মওয়ার্কের জন্য সাধারণত সারফেস ভাইব্রেটর ব্যবহার করা যায়, যা সাধারণত ১৫ সেন্টিমিটার পর পর ঢালাইয়ের গায়ে লাগিয়ে কাজ করা হয়। সর্বাধিক ৬ ইঞ্চির কাস্টিং-এ ভাইব্রেশনের জন্য বড়সড় মাপের ভাইব্রেটর ব্যবহৃত হয় যাদেরকে জাম্পার বলে। এগুলো সুন্দর মসৃণ তল তৈরি করে। আভ্যন্তরীণ ভাইব্রেটর ব্যবহার করে ভিতর থেকে বায়ু বের করে আনা হয়, যাতে মশলা সুন্দরভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

সাধারণত ভাইব্রেটর ব্যবহার করা হয় একদম সব কাজ শেষের দিকে তাই এর জন্য তাড়াহুড়া করাটাও নতুন কিছু নয়। কিন্তু নিয়মমতো ব্যবহার করলে সময়মত কাজ হয়ে যায়। যদি ইন্টার্নাল ভাইব্রেটর ব্যবহার করা হয়, তাহলে ভাইব্রেশনের কাজের পরে ২.৫ সেন্টিমিটার/সেকেন্ড হারে সরাতে হয়। যদি এরপরেও ভাইব্রেট করা জায়গা থেকে বায়ু বুদবুদ বের হয় তাহলে সেই স্থানে আরও ভাইব্রেশন দিতে হবে। ভাইব্রেটর ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে অনেক বেশি সময় ধরে ভাইব্রেট করা না হয়, কেননা এতে করে পানি ও এগ্রিগেট আলাদা হয়ে পড়তে পারে।

এবার আসুন জেনে নেই ভাইব্রেটর ব্যবহারের সময় কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

– যেকোনো কন্সট্রাকশন কাজের সময় এক বা একাধিক ভাইব্রেটর অতিরিক্ত রাখতে পারাটা ভালো।

– শক্ত কনক্রিটের জন্য বেশি সময় ভাইব্রেটর ব্যবহার করতে হয়।

– কোনো কোনো কনক্রিটের জন্য ভাইব্রেটর লাগে না, তাই ব্যবহারবিধি জেনে নিতে হবে। 

– সবসময় নিশ্চিত করতে হবে, ভাইব্রেটর যাতে পুরাতন ঢালা কনক্রিটের স্তর ভেদ করে পরের স্তরে যেতে পারে ন্যূনতম ১৫ সেন্টিমিটার।

– ভাইব্রেটর যাতে খাড়াভাবে ব্যবহার করা হয়।

– নিশ্চিত করতে হবে যে এক জায়গায় ভুলক্রমে একাধিকবার কোনোভাবেই যাতে ভাইব্রেটর ব্যবহার না হয়।

এইসব বিধিমালা মেনে সঠিকভাবে ভাইব্রেটর ব্যবহার করতে পারলে সহজেই দৃষ্টিনন্দন, মজবুত এবং সুরক্ষিত দালান নির্মাণ করা সম্ভব যা হবে আপনার আমার স্বপ্নের বাড়ি।